বেবি ওয়াকার কি আসলেই সহায়ক নাকি ক্ষতিকর?

বেবি ওয়াকার নিয়ে বিতর্ক এখনো জোরালো হচ্ছে! কিছু অভিভাবক বলেন যে এগুলো একটি সহায়ক হাতিয়ার, অন্যরা মনে করে যে এগুলো একেবারে বিপজ্জনক।

তাহলে বেবি ওয়াকার কি আসলেই ক্ষতিকর?

হ্যাঁ, বেবীওয়াকার আসলেই বাচ্চাদের কিছু ক্ষতি করে।

বেবীওয়াকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

প্রথম এবং সর্বাগ্রে, বেবি ওয়াকার ব্যবহার করার সময় সর্বদা নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু নিরাপদ।

বেবি ওয়াকার সম্পর্কে আমাদের নীচের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি দেখুন। এখানে, সমস্ত তথ্য সহ যুক্তির উভয় পক্ষই পর্যালোচনা করা হয়েছে – কিভাবে এটি বাচ্চাদের ক্ষতি করে বা কিভাবে এটি উপকার করে।

এর থেকে আপনি একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন যে আপনার বাচ্চার জন্য বেবি ওয়াকার কিনবেন কি কিনবেন না।

বেবি ওয়াকার কি আসলেই ক্ষতিকর

বিশ্বাসীদের মতে:

শিশুরা সাধারণত নিজে নিজে দাঁড়াতে শেখার কয়েক সপ্তাহ পরেই হাটার জন্য চেষ্টা করে। এটি 12 মাস বয়সী শিশুদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়!

আপনি চান আপনার বাচ্চা দ্রুত হাঁটতে শিখুক, তাই না? বেশিরভাগ বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি হাঁটতে দেখতে চান এবং এর জন্য তারা তাদেরকে সর্বোত্তম পরিবেশ প্রদানের চেষ্টা করেন- গান, খেলনা ইত্যাদি দিয়ে।

শিশুকে হাঁটতে শিখতে সাহায্য করার সেরা উপায়গুলির মধ্যে একটি হল বেবি ওয়াকার!

কিছু বাবা-মা তাদের শিশুদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে এটি ব্যবহার করেন যারা ইতিমধ্যেই বিকাশগত বিলম্বের লক্ষণ দেখাচ্ছে।
তাদের ধারণা বেবী ওয়াকার তাদের বাচ্চার পায়ের মাংসপেশী দৃঢ় করতে সাহায্য করে।

অবিশ্বাসীদের মতে:

বেবী ওয়াকার যে আসলেই উপকারী এই বিষয়টিতে কোন স্পষ্ট ঐক্যমত নেই, যা এটিকে সত্যিই একটি বিতর্কিত বিষয় করে তোলে!

কেউ বিশ্বাস করে বেবী ওয়াকার বাচ্চার বিকাশে সাহায্য করে তো অন্যরা বিশ্বাস করে যে তারা আসলে বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং আরও অন্য দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

আপনার মতামত কি?

যাইহোক, এমন কোন পরিস্থিতি নেই যেখানে বলা যেতে পারে বেবী ওয়াকার নিরাপদ, বা এটি আপনার শিশুকে হাঁটতে শেখাতে উপযোগী।
ফলস্বরূপ, আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (এএপি) বেবি ওয়াকারদের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করেছে।

বেবী ওয়াকার এতটা বিপজ্জনক!

কে জানত?

বেবি ওয়াকার কি আদৌ পিতামাতাকে সাহায্য করে?

বেশিরভাগ অভিভাবকই পর্যালোচনা করেছেন যে…বেবি ওয়াকার অসাধারণ!

তারা সম্মত হবেন যে, একটি বেবী ওয়াকার ঘরে থাকা মানে তাদের কাছে থাকা সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি জিনিস থাকা!

এই ছোট্ট ডিভাইসটি তাদের বাচ্চাকে উঠে দাঁড়ানো এবং ঘুরে বেড়াতে সাহায্য করে।

এগুলো বাবা-মাকে নানাভাবে সাহায্য করে।

এটি আপনার জন্য বাচ্চার সাথে তাল মিলিয়ে চলাকে অনেক সহজ করে তোলে।

এছাড়াও, আপনার কিছু অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন হলে বেবি ওয়াকারকে প্লে-প্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বেবিওয়াকারে থাকা খেলনাগুলো আপনার বাচ্চাকে ব্যস্ত থাকতে সাহায্য করে যাতে করে আপনি অন্য কোনো কাজ করার জন্য একটু সময় পেতে পারেন।

বেবি ওয়াকার ব্যবহার করা মানে কিছু সময়ের জন্য বাচ্চাকে কোল থেকে নামিয়ে নিজের হাতকে একটু বিরতি দেওয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতে

বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে বেবি ওয়াকার উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে সামান্য গবেষণা এবং অন্য জায়গা থেকে কিছু জনসংখ্যা-ভিত্তিক গবেষণার রিপোর্ট করা হয়েছে।

উদ্বেগজনকভাবে, পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যে প্রায় 12% থেকে 50% শিশু যারা বেবি ওয়াকার ব্যবহার করে আহত হয়।

2004 এবং 2008 এর মধ্যে, 15 মাস বা তার চেয়ে কম বয়সী প্রায় 3000 শিশু ছিল যাদের বেবি ওয়াকার ব্যবহারের জন্য আঘাতের কারণে মার্কিন জরুরী কক্ষে চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।

কানাডাতে ইতিমধ্যেই বেবিওয়াকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকাতেও নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভবনা আছে।

বাংলাদেশে এখনো অবধি এটা নিয়ে তেমন গবেষণা করা হয়নি এজন্য বাংলাদেশের মানুষ এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অতটা অবগত না।

কিন্তু অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশেও বেবি ওয়াকারজনিত দুর্ঘটনার ঘটনা কম নয়।

এছাড়া শিশুবিষয়ক গবেষকরা জানিয়েছেন যে, যেসব বাচ্চারা বেবিওয়াকার ব্যবহার করে তাদের হাঁটা শিখতে অন্য বাচ্চাদের তুলনায় বেশি সময় লাগে। তারা সাধারণত বেবিওয়াকারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যায় এবং নিজে নিজে হাঁটতে চায়না।

বেবিওয়াকার ব্যবহার কি বন্ধ করা উচিৎ

বেশ! আমার মতে বেবীওয়াকার ব্যবহার বন্ধ করাটাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

এর পরিবর্তে আপনি নিজে আপনার বাচ্চার হাত ধরে হাঁটা শেখাতে পারেন। এছাড়া আপনার বেলকোনিতে অথবা বারান্দায় দুপাশে দুইটা রড অথবা বাঁশ বেধে সেটা ধরে ধরেও বাচ্চাকে হাঁটার অভ্যাস করাতে পারেন।

আপনি যদি নিজের জন্য একটু অবসর সমর চান তাহলে বাচ্চার জন্য একটি প্লে প্যানেল বা প্লে ইয়ার্ড কিনতে পারেন যা এখন দারাজে সহজেই পেয়ে যাবেন।

যদি একান্তই কোনো উপায় না থাকে তাহলে বেবীওয়াকার ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু অবশ্যই বড়দের কড়া নজরদারির মধ্যে। আপনার বাচ্চাকে দিনে সর্বোচ্চ ২০মিনিট একটানা বেবীওয়াকারে রাখতে পারেন। এর থেকে বেশি সময় রাখলে তা আপনার বাচ্চার শারীরিক বিকাশে সমস্যা করতে পারে।

অবশেষে

সবশেষে একটা কথাই বলতে পারি, বেবীওয়াকার যে একেবারেই কোনো উপকার করেনা তা কিন্তু না। সবকিছুরই একটা ভালো দিক যেমন থাকে তেমনি খারাপ দিকও থাকে। বেবীওয়াকারও এর বাইরের কিছু নয়।

এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে যে আপনি এর খারাপ দিকটাই ধরে বসে থাকবেন নাকি ভালো দিকটা বিবেচনা করে ক্ষতিকর দিকটা কিভাবে কমিয়ে জিনিসটা ব্যবহার করা যায় তাই করবেন।

যাহোক, আশা করি বেবীওয়াকারের নিরাপত্তাজনিত প্রশ্নের উত্তর আপনি এই অনুচ্ছেদটি থেকে পেয়ে গিয়েছেন।

আরো যদি কোনো প্রশ্ন থাকে আমাকে জিজ্জেস করতে ভুলবেন না।

কমেন্ট বক্সে আপনার মুল্যবান মন্তব্য জানান এবং আপনার প্রশ্নটি জানান। আমরা উত্তর দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top