ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। অমুক ফ্রিল্যান্সিং করে, তমুক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে। এমন সব ঘটনা আমাদের আশেপাশেই ঘটছে। কিন্তু অনেকেই আবার ভাবে এটা কি আসলেও সম্ভব? ঘরে বসে আবার টাকা আয় করা যায় নাকি?
হ্যাঁ, সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসেই টাকা আয় করা যায়। যেকোনো একটা বিষয়ে দক্ষতা, একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আর সাথে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই সম্ভব। এমনকি এন্ড্রয়েড মোবাইল দিয়েও ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব।
বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহিণী, সবাই ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে এগোচ্ছে। এমনকি সরকারও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে চাকরীর পেছনে না ছুটে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবতেই প্রথমে যে প্রশ্নটা মাথায় আসে তা হল- কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো?
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কি, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো, কোথা থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো, ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুটা কিভাবে করব, এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানার আগে জানা প্রয়োজন- ফ্রিল্যান্সিং আসলে কি? নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা কে ফ্রিল্যান্সিং বলে।
এই আর্টিকেলটিতে আমি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এছাড়াও আপনারা জানবেন কিভাবে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শিখবেন তার দুইটা সহজ উপায়।
ফ্রিল্যান্সিং কাকে বলে?
আপনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, “ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো বা ফ্রিল্যান্সিং কোথা থেকে শিখবো?” তো উত্তরে আমি আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, “চাকরী কিভাবে শিখবো? চাকরী কোথা থেকে শিখবো?” আপনি কি উত্তর দিবেন?
“ভাই, চাকরী কি আবার শেখা লাগে? আপনি কোনো একটা বিষয়ে এক্সপার্ট, কোনো একটা প্রতিষ্ঠানে সেই বিষয় নিয়ে আপনি কাজ করেন। এটাই তো চাকরী। চাকরী শিখতে হয়না, চাকরীর জন্য কাজটা শিখতে হয়।”
ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং কোন নির্দিষ্ট কাজ নয় বরং একটা পেশা। যেমন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, পুলিশ, সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি ইত্যাদি। এখন ডাক্তারদের ভেতরেও আবার বিভিন্ন ভাগ আছে, একেকজন একেক বিষয়ে দক্ষ, যেমন- ডেন্টিস্ট আই স্পেশালিষ্ট, হার্ট স্পেশালিস্ট, ইত্যাদি, তেমনি ফ্রিল্যান্সিংয়েও একেকজন ফ্রিল্যান্সার একেক বিষয়ে এক্সপার্ট। কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কেউ এসইও এক্সপার্ট, কেউ বা আবার ডাটা এন্ট্রি করে, কেউ আবার করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং।
এজন্য ফ্রিল্যান্সিং আলাদা করে কোনো শেখার ব্যাপার নয় বরং ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের বিভিন্ন বিষয়ের কাজ শেখা যায়। এতে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট কোনো ক্লাইন্ট নাই। একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের ইচ্ছামত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অথবা কোনো ব্যাক্তির জন্য কাজ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের পছন্দমত যেকোনো ব্যাক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন। এখানে নেই কোনো বাধা-ধরা অফিস টাইম, নেই কোনো বাধা-ধরা নিয়ম। কোনো অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই করা যায়। আপনি আপনার ক্লায়েন্টের কাজ শেষ করলেন, পেমেন্ট পেলেন, এবার চাইলে অন্য কোনো ক্লায়েন্টের কাজ করতে পারবেন।
এবার হয়ত আপনি বলতে পারেন “ অমুককে দেখি, ফ্রিল্যান্সিং করে, মাস শেষে বেতন পায়। আবার নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করা লাগে। কিন্তু আপনি তো বলছেন ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোনো বাধাধরা অফিস টাইম নেই।” এখানে একটা ব্যাপার আছে- “আউটসোর্সিং”। এই শব্দটা একটু কম পরিচিত। আউটসোর্সিং বলতে কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মী না হয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে ওই কোম্পানীর অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করাকে বোঝায়। এক্ষেত্রে কর্মীটি একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর তার পেমেন্ট পাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর প্রধান পার্থক্য হলো- একজন ফ্রিল্যান্সার ক্লাইন্টের কাজ শেষ করলেই তার দায়িত্ব শেষ, পেমেন্ট নিয়ে সে অন্য কোনো ক্লায়েন্টের কাজ নিতে পারে। কিন্তু একজন আউটসোর্স কর্মী চুক্তির সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের হয়েই কাজ করবে।
ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার?
এবার হয়ত অনেকের মনেই প্রশ্ন হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার? আসলে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রকারভেদ করাটা মুশকিল। অনেকেই একে দুভাগে ভাগ করে- অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং আর অফলাইন ফ্রিল্যান্সিং।
যারা অনলাইন মাধ্যমে কোনো ব্যাক্তি বা মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ নিয়ে নিজের সময় মত করে সেটাকে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং বলা যায় আর যারা অফলাইনের মাধ্যমে কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে তাদের কাজ কে অফলাইন ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়ে থাকে। যেমন: একজন ফটোগ্রফার বা ফ্রিল্যান্সিং সাংবাদিক বা লেখক।
আমার মতে ফ্রিল্যান্সিং কে, স্বতন্ত্র ফ্রিল্যান্সিং ও গ্রুপভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং -এ দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। মার্কেটপ্লেসে নিজে নিজে কাজ করাকে স্বতন্ত্র ফ্রিল্যান্সিং বলা যেতে পারে।
আবার অনেককেই দেখেছি একা কাজ না করে কোনো এক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ নিয়ে কয়েকজন মিলে গ্রুপে কাজটি করে। এতে কাজটি করতে সময় কম লাগে। এবং কাজটা সুন্দরভাবেও হয়। একে গ্রুপভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং বলা যেতে পারে। এখানে একটা গ্রুপ লিডার থাকে যে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের ক্ষেত্র বিশাল। আপনি যদি কোনো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে যান তো দেখতে পাবে সেখানে বিভিন্ন ধরণের সার্ভিস পাওয়া যায়। কারো একজন নিউট্রিশনিস্ট দরকার, মার্কেটপ্লেসে খুজলেই হাজার হাজার পেয়ে যাবে যারা তাকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট দিবে, অনলাইন সাপোর্টও দিবে। সাইকিয়াট্রিক সেশন এমনকি অনলাইন টিউটরও পাওয়া যাবে সেখানে। মোট কথা আপনি যে বিষয়ে এক্সপার্ট সে বিষয় নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। তবে এগুলোকে মেইন ফ্রিল্যান্সিং জব বলা যায়না। ফ্রিল্যান্সিং এর মেইন জবগুলো হলো_
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- আর্টিকেল রাইটিং
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ডাটা এট্রি
- আইটি ও নেটওয়ার্কিং
- কাস্টমার সার্ভিস
- সেলস এবং মার্কেটিং
- ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
- প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
- ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি।
তো এবার হয়ত আপনি ভাবছেন ফ্রিল্যান্সিং তো শুরু করবো কিন্তু এটা কি হালাল হবে?
কোনো উপার্জন হারাম কেন হয়? কারো ক্ষতি করে বা কোনো অনৈতিক, আইনবিরোধি কাজ করে অর্থ উপার্জন করলে সেটা হারাম হয়। যেমন সুদ, ঘুষ। এখন আপনি হ্যাকার হলেন। কারো ক্ষতির উদ্দেশ্যে কেউ আপনাকে কিছু হ্যাক করতে বললো। তাহলে এখান থেকে উপার্জিত অর্থগুলো অবশ্যই হারাম। এটা ঘুষের পার্যায়ে পড়ে।
কিন্তু কোনো একজন অপরাধী ধরার জন্য আপনাকে তার মোবাইল লোকেশন হ্যাক করতে বলা হলো। এই উপার্জনটা কিন্তু আপনার হারাম হবেনা। এটা অনেকটা নিয়তের উপর নির্ভর করে। আবার ধরুন আপনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। কেউ আপনাকে কোনো একজনের কার্টুন আঁকাতে বললো। ইসলামে কোনো জীবীত প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা নিষিদ্ধ। তাহলে এটা নিশ্চয় হারাম হবে।
যাহোক, ইসলাম বিষয়ে আমার জ্ঞান বেশ সীমিত, তাই এটা নিয়ে বেশি আলোচনা না করাটাই ভালো। তবে যে কাজটায় আপনার মন থেকে সায় না দেয়, সেটা না করাই ভালো। এবিষয়ে যদি আরো জানার থাকে তাহলে কোনো ভালো ইসলামিক স্কলারের থেকে জানাটাই শ্রেয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুটা যেভাবে করবেন
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য আপনাকে যেকোনো একটা বিষয়ে পারদর্শী হলেই যথেষ্ট। এজন্য প্রথমেই আপনি যেটা করতে পারেন যে ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কাজের চাহিদা কেমন সেটা খোঁজ নেওয়া এবং কোন কাজ শিখতে কতদিন সময় লাগবে তা জানা। সাথেই আপনার যদি খুব দ্রুত উপার্জনের প্রয়োজন হয় তো কোন কাজ শিখলে দ্রুত কিছু উপার্জন সম্ভব সেটাও খোঁজ নিতে হবে। আপনি গুগল, ইউটিউব এবং চাইলে আশেপাশের কোনো ফ্রিল্যান্সারের থেকেও পরামর্শ নিতে পারেন।
এবার কাজ সিলেক্ট করার পর সেটা শেখার জন্যও আছে গুগল বা ইউটিউব। কিন্তু আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো কোনো ট্রেইনারের কাছ থেকে শিখতে। নিজে নিজে ইউটিউব দেখে শিখতে গেলে হয়ত আপনি ঠিক করতে পারবেন না কিভাবে, কোনটার পর কোনটা শিখবেন। এতে আপনার শিখতে অনেক সময় লেগে যাবে আর ভালোমত সব শেখাও হবে না।
কিন্তু কোনো ট্রেইনারের কাছ থেকে শিখলে তিনি আপনাকে সুন্দর করে ক্রমান্বয়ে শেখাতে পারবেন। অনলাইনেই কিছু কোর্স পাবেন যার মাধ্যমে ঘরে বসেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শিখতে পারবেন। আমি এখানে দুইটা কোর্সের সাজেশন দেবো আমার নিজের ফ্রিল্যান্সিং জার্নিটাও যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো
প্রিয় পাঠক,
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত আমার এই আর্টিকেলটি আশা করি আপনার কাজে দেবে। এ সম্পর্কে আপনার যদি আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আমি উত্তর দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
ধন্যবাদ।