কনটেন্ট রাইটিং এর খুঁটিনাটি

কনটেন্ট শব্দটার সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। ইংরেজি শব্দ কন্টেন্ট বলতে আমরা বাংলা প্রতিশব্দ বিষয়বস্তু জানি।কিন্তু কনটেন্ট রাইটিং আবার কি? গল্প-উপন্যাস লেখার মত কিছু? কনটেন্ট রাইটিং শব্দটা শুনলেই এই প্রশ্নটা সবার আগে মাথায় আসে। হ্যা, কনটেন্ট রাইটিংও গল্প-উপন্যাস লেখার মতই। আসলে গল্প-উপন্যাসই এর একটা অংশ। কোনো একটা বিষয়বস্তু লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করাকে কনটেন্ট রাইটিং বলে। সেটা হতে পারে কোনো গল্প-কাহীনি বা কোনো অনুচ্ছেদ অথবা কোনো তথ্যসম্ভার।

আমার এই আর্টিকেলে আজ আমি আলোচনা করব কনটেন্ট রাইটিং এর খুঁটিনাটি বিষয় ও এবিষয়ে সাধারন কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে যেমন_ কনটেন্ট কি? কনটেন্ট কত ধরণের হয়? কনটেন্ট রাইটিং কত প্রকার? কনটেন্ট মার্কেটিং কি? কনটেন্ট মার্কেটিংও কি ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ? কনটেন্ট রাইটিং করে কি টাকা ইনকাম করা যায়? কনটেন্ট রাইটিং এর জব সুবিধা কি কি? কনটেন্ট রাইটিং শেখার উপায় কি? কনটেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়? এখানে আমি এসকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়ুন।

কনটেন্ট কি? What is Content?

ধরুন আপনি কক্সবাজার বেড়াতে গেলেন। কখন, কোথা থেকে বাসে উঠলেন, কখন পৌছলেন, কোথায় থাকছেন, কি কি দেখলেন, সবকিছু ফোনে ভিডিও করে ভয়েস দিয়ে তথ্যগুলো দিয়ে বা ভিডিওটি এডিট করে টেক্সট ফর্মাটে তথ্য দিয়ে একটা সুন্দর ভ্লগ (vlog) তৈরি করলেন। এটাই একটা কন্টেন্ট। একটা ভিডিও কনটেন্ট। এখানে আপনার অভিজ্ঞতাটাকে ভিডিওএর মাধ্যমে সবার কাছে শেয়ার করছেন।

কনটেন্ট বলতে বোঝায়, নিজের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান বা কৌশলের মাধ্যমে তৈরি করা কোনো একটা বিষয়বস্তু সেটা হতে পারে কোনো গল্প-কাহীনি বা কোনো অনুচ্ছেদ অথবা কোনো তথ্যসম্ভার, হতে পারে ভিডিও ফর্মাটে বা অডিও-টেক্সট, যেকোন কিছু।

এই যে আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, এটাও একটা কনটেন্ট, ইনফর্মেশন বেইজড কনটেন্ট। এখানে আমি আপনাদেরকে কিছু তথ্য (Information) দিচ্ছি।

কনটেন্ট ৪ ধরণের হয় যথা,

  • Audio content: ভয়েস বা অডিও এর মাধ্যমে রেকর্ড করা কনটেন্ট। যেমন, Podcast, FM ইত্যাদি।
  • Video content: ভিডিওর মাধ্যমে তৈরি করা কনটেন্ট গুলোকে ভিডিও কন্টেন করা হয়। যেমন, YouTube video, Web series, Movies, Vlog ইত্যাদি।
  • Text content: যে কনটেন্ট গুলোকে টেক্সট বা লেখার মাধ্যমে তৈরি করা হয় সেগুলোকে টেক্সট কনটেন্ট বলে। যেমন, Blog, Article, Book ইত্যাদি।
  • Image content: ছবি এডিটিং করে তৈরি করা বিষয়বস্তু গুলোকে ইমেজ কনটেন্ট বলে। এখানে থাকতে পারে শুধুই ছবি বা ছবির সাথে টেক্সট। যেমন, Logo, Templates, Memes Graphics ইত্যাদি।
content koto dhoroner hoi

কনটেন্ট রাইটিং কত প্রকার?

content writing koto prokar

কোনো একটা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুকে লিখে প্রকাশ করাকেই কনটেন্ট রাইটিং বলে, সেটা হতে পারে অনেক বড় কিংবা ছোট ২-৩ লাইনের।

আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ি, ফেসবুকে বা অন্যান্য সাইটে গল্প পড়ি, বিভিন্ন প্রডাক্টের রিভিউ পড়ি, এসবই হচ্ছে রাইটিং কনটেন্ট। এমনকি সোস্যাল মিডিয়ার পোস্ট, ভিডিও বা ছবি আপ্লোডের সময় যেসব ক্যাপশন দেওয়া হয় সেগুলোকেও কনটেন্ট বলা যায়।

আর যারা কনটেন্ট লেখে তাদেরকে কনটেন্ট রাইটার বলা হয়। কনটেন্ট রাইটিং বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।

আর্টিকেল রাইটিং

আর্টিকেলগুলি সর্বাধিক ফর্মালি লেখা হয় এবং এটি বাস্তবধর্মী লেখার উপর ভিত্তি করে। সাধারণত আর্টিকেল বা নিবন্ধগুলি 300 শব্দের বেশি এবং কখনও কখনও 1000 শব্দেরও বেশি। এটি সাক্ষাত্কার, গবেষণা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ বা প্রতিবেদন এবং ঘটনা ভিত্তিক। এটি প্রোফেশনাল টোনে লিখতে হয়। এটি পাবলিশের আগে এডিটর ও রিভিউয়ার এর ভেরিফিকেশন প্রয়োজন পড়ে।

ব্লগিং

ব্লগ হল এক ধরনের অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ব্লগ শব্দটি ওয়েবব্লগের সংক্ষিপ্ত রূপ। যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলা হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর পাঠকগণ সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। এটি ক্যাজুয়ালি লেখা হয় এবং এর জন্য কোনো প্রোফেশনাল টোন দরকার নেই। সাধারণত ৩০০শব্দের ভেতরে হয়ে থাকে।

কপিরাইটিং

কপিরাইটিং হল ওয়েবসাইট এবং বিজ্ঞাপনের অনুলিপি তৈরির মূল। কপিরাইটিং এর লক্ষ্য হল আপনার পণ্য বর্তমান এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা। এই ধরনের কনটেন্ট লেখার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে,

  • Product descriptions
  • Sales collateral
  • Advertisements
  • Press releases
  • Print ads
  • Infographics.
copywriting

টেকনিকাল রাইটিং

টেকনিক্যাল রাইটিং শব্দটি শুনলে কঠিন কোনো বিষয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আপনার নিজের ব্যবসা এবং পণ্য সম্পর্কে অন্যকে বোঝানোর জন্য কখনও কখনও এটিই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হতে পারে। সাদা কাগজ তৈরি করা থেকে শুরু করে ইবুক থেকে হাউ টু পর্যন্ত, আপনার পণ্য বা পরিষেবা কীভাবে কাজ করে, আপনার গ্রাহক কীভাবে এটি প্রয়োগ করতে পারে এবং আপনার গ্রাহকদেরকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অবগত করার জন্য এটি একটা ভালো উপায়।

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট

ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কডিন, টুইটার ইত্যাদি সোস্যাল সাইটে বিভিন্ন ধরণের লেখা, ছবি, ভিডিও পোস্ট করা হয়। আপনার সোস্যাল সাইটে যুক্ত ফ্রেন্ডস, ফলোয়ারসদের কাছে আপনার মন্তব্য, চিন্তা ভাবনা ইত্যাদি পৌছে দেওয়ার জন্য এসকল পোস্ট হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়া কনটেন্ট।

ইমেইল

যদিও ইমেল প্রচারাভিযান কপিরাইটিং বিভাগের অধীনে পড়তে পারে, আপনার ইমেলগুলিকে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ। কপিরাইটিং অংশগুলি এমন একটি শ্রোতার দিকে পরিচালিত হয় যারা আপনার ব্র্যান্ড এবং আপনি যে সমাধানগুলি অফার করছেন তার সাথে অপরিচিত।

কিন্তু ইমেলের মাধ্যমে, আপনি সাধারণত আপনার লয়াল ফ্যান এবং আপনার গ্রাহকদের টার্গেট করতে পারেন যারা অলরেডি আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে অবগত আছেন এবং আরও নতুন কিছুর জন্য ফিরে আসছেন।

প্রফেশনাল কনটেন্ট রাইটার কিভাবে হবো?

কন্টেন্ট রাইটিং আপাত দৃষ্টিতে অনেক সহজ মনে হলেও আসলে অতটাও সহজ নয়। এর জন্য কিছু রিকয়রমেন্ট আছে। একজন ভালো কন্টেন্ট রাইটার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই এগুলো পূরণ করতে হবে।

professional content writer
  • লেখালেখির প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে
  • ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা করতে হবে
  • টাইপিং এর দক্ষতা এবং ধৈর্য্য থাকতে হবে
  • গুগোল সার্চ করে যেকোন কিছু খুঁজে বের করার ক্ষমতা
  • কম্পিউটার/ ল্যাপটপ/ স্মার্টফোন ( যেটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার ও টাইপিং করা যাবে)
  • যে ভাষায় লিখবেন সেই ভাষা সম্পর্কে মোটামুটি ভালো রকমের দক্ষতা থাকতে হবে
  • যে দেশের মানুষকে টার্গেট অডিয়েন্স করতে চান তাদের মত করে শব্দের ব্যবহার জানতে হবে অর্থাৎ ন্যাটিভ টোন থাকতে হবে লেখায়।
  • একটি লেখাকে বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা থাকতে হবে।

কন্টেন্ট রাইটিং শেখার উপায়

প্রথমেই আমার রাইটার হওয়ার গল্পটা আপনাদের কাছে শেয়ার করি তাহলে হয়ত আপনার রাইটিং শেখার পথটা আরো সহজ মনে হবে।

ছোটবেলা থেকেই আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি এবং লেখালিখির পরেও বেশ আগ্রহ ছিলো। আমার মনে আছে ক্লাস টেনে থাকতে আমি খাতায় একটা গল্প লিখেছিলাম, “অনন্তের পথে”। মূলত এখান থেকেই আমার লেখালিখির শুরু। তার কিছু বছর পর ফেসবুকের বদৌলতে বেশ কিছু গল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ হল। যদিও গল্প লেখাটা রেগুলার হত না।

অনার্সে ওঠার পর পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করতে হবে চিন্তাটা মাথায় চাপলো। তো আমার এক কাজিনের কাছে পরামর্শ নিলাম ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখার জন্য। উনি আমাকে সাজেশন দিলেন কন্টেন্ট রাইটিং এর। এমনিতেই আমার লেখালিখি ভালোলাগে, তাই কন্টেন্ট রাইটিংটাকেই বেছে নিলাম। প্রথমে টেন মিনিট স্কুলের “ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং” কোর্সটি করলাম। এখান থেকে কন্টেন্ট রাইটিং এর বেশ একটা ভালো ধারণা পেয়েছিলাম।

তারপর রুবাব’স ডিজিটালের “Content Writing” কোর্সটি করলাম। এখান থেকে শুধু রাইটিং শেখাই নয় বরং হাতে-কলমে ট্রেনিংএর মাধ্যমে আমার রাইটিংএর জার্নিটা আরো সহজ হয়েছে। আপনি যদি একজন ভালো কন্টেন্ট রাইটার হতে চান তো রাইটিং এর শুরুটা আমার মত করেও করতে পারেন। এখানে একটা কথা বলে রাখি, অনেকেই হয়ত আপনাকে বলবে, এসব শেখার জন্য আবার কোর্স করা লাগে? গুগোল, ইউটিউব থেকেও শেখা যায়।

হ্যা। কথাটা মিথ্যা নয়। কিন্তু গুগোল ইউটিউব থেকে কোন কিছু শিখতে গেলে অনেক সময় প্রয়োজন। আপনার হাতে হয়ত এত সময় নেই। আর তাছাড়া কিভাবে শিখতে হবে, কোথা থেকে শুরু করতে হবে, কোনটার পরে কোনটা শিখতে হবে, এগুলো কিন্তু গুগল ইউটিউব আপনাকে ক্লিয়ারলি বলবেনা।

তাই আমার মতে যেকোনো স্কিল শেখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কোন একজন ইন্সট্রাক্টর এর আন্ডারে শেখা। এর জন্য আপনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অফলাইনেও শিখতে পারেন অথবা কোনো অনলাইন কোর্সের মাধ্যমেও শিখতে পারেন।

FAQ

কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?

কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য সমূহের উপকারিতা, ব্যবহার উপযোগিতা, কোন তথ্যবহুল বিষয়, কিংবা কোন মজাদার অভিজ্ঞতার কথা যে মাধ্যমে তাদের টার্গেট অর্ডিয়েন্সের কাছে শেয়ার করে থাকে তাকে বলা হয় কন্টেন্ট মার্কেটিং।

কন্টেন্ট মার্কেটিংও কি ডিজিটাল মার্কেটিং এর অংশ?

হ্যা। কন্টেন্ট মার্কেটিং ও এক ধরণের ডিজিটাল মার্কেটিং ।

কন্টেন্ট রাইটিং করে কি টাকা ইনকাম করা যায়?

হ্যা, কন্টেন্ট রাইটিং করে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। একজন ভালো ফ্রিল্যান্স রাইটার ঘণ্টায় ১৫-৫০$ পর্যন্ত ইনকাম করতে পারেন। একটা ৫০০ শব্দের আর্টিকেলের জন্য ৩-৫০$ পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।

কন্টেন্ট রাইটিং এর জব সুবিধা কি কি?

বিভিন্ন অনলাইন বা অফলাইন প্রতিষ্ঠানে Content Writer, Web Content Writer, Content Marketer, Email Marketer, Proofreader, Blog writer, Freelancer ইত্যাদি পজিশনে জব পাওয়া সম্ভব।

আর্টিকেল ও ব্লগের পার্থক্য কি?

আর্টিকেলগুলো সর্বাধিক ফর্মালি ও বাস্তবধর্মী লেখা হয় এবং সাধারণত 300 শব্দের বেশি এবং কখনও কখনও 1000 শব্দেরও বেশি হয়। অন্যদিকে ব্লগগুলি ক্যাজুয়ালি লেখা হয় এবং এটি সাক্ষাৎকার বা গবেষণার উপর নির্ভর করে না। এটিতে টিপস, পাঠ, মতামত এবং সরঞ্জাম ইত্যাদি রয়েছে এবং সাধারণত 300 শব্দের কম হয়।

কন্টেন্ট রাইটিং দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?

হ্যা। ফ্রিল্যান্সিং এর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে কন্টেন্ট রাইটিং। অনেকেই তাদের ওয়েবসাইট বা অন্যান্য কাজে ফ্রিল্যান্স রাইটার হায়ার করে। এবং শব্দের সংখ্যার উপর নির্ভর করে তাকে পেমেন্ট করা হয়।

প্রিয় পাঠক,

আশা করি কন্টেন্ট রাইটিং এর আমার এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

কমেন্ট বক্সে আপনার মতামতটি জানান। আর কোনো প্রশ্ন থাকলেও জানাতে ভুলবেন না।

ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

2 thoughts on “কনটেন্ট রাইটিং এর খুঁটিনাটি”

  1. Can I simply say what a relief to uncover somebody that truly understands what they are discussing over the internet. You certainly know how to bring an issue to light and make it important. A lot more people must look at this and understand this side of your story. I was surprised that you are not more popular given that you most certainly have the gift.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top